বসুন্ধরা গ্রুপ নিয়ে কী করছে দুদক ও অন্য সংস্থাগুলো

 

বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক আহমেদ আকবর সোবহান


বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই অর্থ সরানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে বহুমুখী অনুসন্ধান করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। এসব অনুসন্ধান শেষ হলে তার ভিত্তিতে গ্রুপটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্দোলনের মুখে গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাঁচই সেপ্টেম্বরে পুলিশের সিআইডি বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয়।

সিআইডির ওই বিজ্ঞপ্তিতে তখন সায়েম সোবহান আনভীরকে 'দেশের সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক' বলে উল্লেখ করা হয়েছিলো।

গত বাইশে জুলাই সরকার বিরোধী তীব্র গণআন্দোলনের সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে যেসব ব্যবসায়ী আলোচনায় এসেছিলেন তাদের মধ্যে এই গ্রুপের মালিক আহমেদ আকবর সোবহানও ছিলেন।

শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সভায় আন্দোলনকারীদের ইঙ্গিত করে তখন তিনি বলেছিলেন, “আমাদের এই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বাহিনী ধ্বংস করতে হবে। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে”।

ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন দুদক মি. সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা সম্পত্তির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

দুদকের আবেদনের প্রেক্ষাপটে আদালত ইতোমধ্যেই বসুন্ধরার মালিকদের বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ কিংবা অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল বা সিআইসিও বসুন্ধরাসহ কয়েকটি শিল্প গোষ্ঠীর বিষয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকির বিষয়ে আলাদা করে অনুসন্ধান শুরু করছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

"আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। এটা সম্পূর্ণ প্রতিহিংসাও হতে পারে। আমরা এর সবই আইনি ভাবে মোকাবিলা করবো," বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

বসুন্ধরা গ্রুপকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী হিসেবে মনে করা হয়। এর ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৭ সালে আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে এর গোড়াপত্তন হয়েছিলো। পরে সিমেন্ট, শিপিং, মিডিয়া, টিস্যু পেপার, নিত্য পণ্য ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন খাতে তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে।

সিআইডি, সিআইসি ও দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর অক্টোবরের শুরুর দিকে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান আহমেদ আকবর সোবহান প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর বিবৃতি ও প্রোপাগান্ডা’ বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক আহমেদ আকবর সোবহান ও তার সন্তানদের প্রভাবশালী হিসেবে মনে করা হয়। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের সখ্যতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। বিভিন্ন সময় নানা ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন এ পরিবারের সদস্যরা।


14-12-24

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন