ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে যান মাসুম আহমেদ। এটা তার ছদ্মনাম। মাসুম আহমেদ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতা। পরীক্ষা দিতে এসে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন মাসুম আহমেদ।
"আমার পরীক্ষা তখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাঁচ মিনিট বাকি আছে। এমন সময়ে ওরা আসলো। পরীক্ষার হলের সামনে এসে গেটে ধাক্কা শুরু করলো। গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করলো। স্যার তখন বললেন যে, পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব না। এটা বলে উনি খাতা নিয়ে চলে গেলেন," বলছিলেন মি. আহমেদ।
নিরাপত্তার কারণে তার পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিলো ভিন্ন একটি স্থানে, গোপনে। কিন্তু সেখানেও শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন তিনি।
মি. আহমেদ বলছিলেন, "আমি চেয়ারম্যান স্যারকে বলেছিলাম, স্যার আমি তো কোনও মামলাভুক্ত আসামি না। আমার নামে কেউ কোনও অভিযোগও করেনি। আমার নামে আক্রমণ, হামলার কোনও ছবি বা ভিডিও নেই। তাহলে আমি তো পরীক্ষাটা দিতে পারি। উনি তখন রাজি হয়েছিলেন। বলেছিলেন যে, নিরাপত্তার কারণে সবার সঙ্গে আমার পরীক্ষা হবে না।"
"কিন্তু আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয়া হলেও সেটা আর গোপন থাকেনি। সেখানেও বাধার মুখে পড়লাম। হামলা থেকে বাঁচাতে প্রক্টর স্যার আমাকে থানায় নিয়ে গেলেন, তারপর আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়।"
মি. আহমেদ জেলে ছিলেন আঠারো দিন। এরপর জামিন পান। কিন্তু পরীক্ষা মিস হয়ে যায়। তিনি বলেন, "আমার একাডেমিক ক্যারিয়ার অনিশ্চিত। আমার তো এবছরটা নষ্ট হলো। আমি আগামী বছরও পরীক্ষা দিতে পারবো কি না সেটা নিয়ে সন্দিহান।"
মি. আহমেদ ক্যাম্পাসে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি, শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর অনেকেই এই একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না।
মূলত ছাত্রলীগের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের ক্যাম্পাসে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলেই অভিযোগ। এক্ষেত্রে এমনকি ছাত্রলীগের পদে না থাকলেও শুধু সমর্থক হওয়ার কারণেও হয়রানির অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন এসব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত কী?
